সিবিএন ডেস্ক

সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া আলোচিত জ্বর ‘চিকুনগুনিয়া’ কক্সবাজারেও প্রভাব ফেলেছে। ধীরে ধীরে বাড়ছে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা।

গ্রাম ও শহরে সমান তালে ছড়িয়ে পড়েছে রোগটি। গত এক মাসে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসাদের মাঝে শতকরা ২০ জন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত বলে দাবি করেছে হাসপাতাল সূত্র।

প্রকোপ বাড়ায় আতঙ্ক বেড়েছে জনমনে। জ্বরটির প্রকোপ ও করণীয় নিয়ে আলোচনা সভা করেছে কক্সবাজার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের আলোচনা সভা শেষে এ নিয়ে আলোচনা করা হয়।

কক্সবাজার সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, কক্সবাজারে গত এক মাস ধরে চিকুনগুনিয়ার প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। জুন মাসে জ্বর নিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন হাসপাতালে এসেছে। তার মধ্যে অন্তত দুইজন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। সে হিসাবে শতকরা ২০ জন মানুষ চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে।

তবে আক্রান্তদের অভিযোগ, কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এই রোগের চিকিৎসা পাচ্ছেন না তারা। চিকনুগুনিয়া শনাক্ত হলেই তাকে প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত অন্তত ৮০ শতাংশ রোগী প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

অভিযোগ সম্পর্কে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) শাহীন আবদুর রহমান বলেন, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের মূল চিকিৎসা হলো পরিচর্যা। জনবল সঙ্কটের মাঝেও সব ধরনের সেবা দিচ্ছে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই চিকুনগুনিয়া আক্রান্তদের সেভাবে পরিচর্যা করা সম্ভব হয়ে উঠে না বলেই প্রাথমিক চিকিৎসার পর প্রাইভেটভাবে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানী ঢাকা থেকে চিকুনগুনিয়া সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। ঢাকা আসা-যাওয়ায় থাকা লোকজনের মাধ্যমে রোগটি কক্সবাজারে ছড়াচ্ছে। ঢাকায় চিকুনগুনিয়া ভাইরাস বহনকারী মশার কামড় খেয়ে কক্সবাজার আসা মানুষটির মাধ্যমে পর্যটন নগরীতে বিস্তার ঘটছে রোগটির। আবার অনেক পর্যটকের মাধ্যমেও এই ভাইরাসটি সমুদ্র শহরে আসছে বলে অভিমত স্বাস্থ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্টদের। এভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি ছাত্রলীগের সভাপতি মইন উদ্দীন বলেন, বিশেষ কাজে ঢাকা গিয়ে সেখানে পরিচিত একজনের বাসায় ওঠেন। সে পরিচিত জন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। তার সঙ্গে অবস্থানের পর কক্সবাজারে ফিরে তিনদিনের মাথায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হন মইন উদ্দীন।

জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আবদুস ছালাম বলেন, চিকুনগুনিয়া নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ সবসময় সজাগ রয়েছে। রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহা-পরিচালকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ। তার পরামর্শ মতে চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদারে কাজ চলছে। পৌর শহরে মশা নিরোধে সব ধরনের উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, চিকুনগুনিয়া রোগটি ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও বেশ পীড়াদায়ক। জ্বর কমে গেলেও শরীর ব্যথা, দুর্বলতা ইত্যাদি দীর্ঘসময় থেকে যায়। এ রোগের বাহক মশা।

চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস ছড়ানো মশা দিনের বেলা কামড়ায়। তাই দিনের বেলা ঘুমালে অবশ্যই মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে।

এছাড়া মশা যাতে জন্মাতে না পারে সেজন্য বাসার ভেতরে ও বাইরে পড়ে থাকা বালতি, ড্রাম, মাটির পাত্র, টিনের কৌটা, পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত যানবাহন, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত চৌবাচ্চা, পরিত্যক্ত বিভিন্ন ধরনের খাবারের প্লাস্টিক বা মাটির পাত্র, ফ্রিজ বা এয়ারকুলারের নিচে এবং বাড়ির ছাদ বা মেঝের নিচু স্থানে তিনদিনের অতিরিক্ত জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশ বিস্তার করে।

তাই পরিত্যক্ত জিনিস জমতে দেবেন না এবং ঘররের চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রয়োজনে শরীরের অনাবৃত স্থানে মশা নিবারক ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত হলে ভয়ের কিছু নেই। সময়মতো সুচিকিৎসায় চিকুনগুনিয়া ভালো হয়।